গাইবান্ধায় টাকা চুরির অভিযোগে শিশুকে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ | N NEWS 24
প্রতিনিধি, গাইবান্ধাঃ
টাকা চুরির অভিযোগ এনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় এক শিশুকে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
শিশুটির বয়স নয় বছর। নাম রানা মিয়া। তার বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামে।
সে ওই গ্রামের আনছার আলীর ছেলে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাতে গণমাধ্যমের নজরে আসে।
এছাড়া খুটিতে বেঁধে রাখার ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুটির দুই হাত পিছনে খুটির সাথে বেঁধে রাখা। পিট ও বাধা দুই হাতের মাঝখানে খুঁটি। কিছু নারী-পুরুষ তাকে ঘিরে আছে। নানা জনে তাকে নানা প্রশ্ন করছে। এসময় শিশুটিকে বলতে শোনা যায়, হাত খুলে দেন ঝিনঝি (ব্যথা) লাগছে। এ সময় শিশুটিকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ঠোট ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল।
এলাকাবাসী ও শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিন আগে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি থেকে মোবাইল ও কিছু টাকা হারিয়ে যায়। এই ঘটনায় জড়িত মনে করে ওই শিশুটিকে মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে সন্দেহজনকভাবে তার বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়। তাকে প্রায় ঘন্টাব্যাপী স্থানীয় বাজারে একটি মুদি দোকানের সামনের রড সিমেন্টের তৈরি খুঁটির সাথে পিছনে দুই হাত বেঁধে রাখা হয়। এসময় তাকে নির্যাতন করে মারধর করে ওই ব্যবসায়ী ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে শিশুটির হাতে সুচ ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে তাকে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে দুই টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটি হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ছিল। শিশুটি বাম হাত ও বাম পায়ে আঘাত পেয়েছে। উঠে দাঁড়াতে পারে না।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুরঞ্জন কুমার মুঠোফোনে বলেন, শিশুটি বাম হাত ও বাম পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিশুটির মা রেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, টাকা চুরির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। তারপর আমার শিশু ছেলেটিকে বিনা অপরাধে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমার ছেলেকে ছেড়ে দেয় তারা। তিনি বলেন, আমার ছেলে কোন দোষ করেনি। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই। কিন্তু আমাকে মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে গতকাল বুধবার রাতে সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজ উদ্দিন খন্দকার জানান, শিশুটিকে খুঁটিতে বেঁধে রাখার কথা শুনেছি। আমি সশরীরে হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়েছি। শিশুটির অভিভাবককে মামলা দেওয়ার কথা বলেছি। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে এসব বিষয় জানতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে তিনি ফোন ধরেননি। তারপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
No comments