কালাইয়ে এক দিনের মাছের মেলা,চলছে জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা | N NEWS 24
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ স্টাফ রিপোর্টারঃ
জয়পুরহাটে প্রতি বছরের মতো এবারও নবান্ন উৎসবকে ঘিরে জমে উঠেছে মাছের মেলা। জেলার কালাই উপজেলায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এক দিনের মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
অগ্রহায়ণ মাস শুরুর সঙ্গে গ্রাম বাংলার পরিবেশে ফসল তোলার ধুম পড়ে যায়। নতুন ধান ঘরে তোলে কৃষকরা। শুরু হয় নবান্ন। কৃষিমুখী মানুষগুলোর মাঝে বইতে থাকে উৎসবের হাওয়া। যান্ত্রিক সময়ে এসব খুব একটা দেখা যায় না। তবু এখনও বহু গ্রামে টিকে আছে নবান্নের রীতি। এমনই ধারাবাহিকতা দেখা মিলে জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে মাছের মেলা। সেখানে সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। সেখানে ভোর থেকে বছেসে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। ৫ কেজি থেকে শুরু করে ১৮ কেজি ওজনের বড় মাছ। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ৩শ থেকে ১২শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় অংশ নেন উপজেলার মাত্রাই, বিয়ালা, সোমশিরা, শালগুন, গাড়ইল, দুধাইল, কাশিপুর, হাতিয়র, মাদারপুর, জিন্দারপুর, হারুঞ্জা, পুনট, বেগুনগ্রাম, পাঁচগ্রামসহ আশপাশের ৭০-৮০টি গ্রামের মানুষ। উৎসবে প্রতি বাড়িতে মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন মেলায় মাছ কিনতে। এই মাছের মেলায় ক্রেতারা ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, বø্যাককার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। আবার এইসব মাছ দেখতে এসেছেন অনেকেই। তবে এই মাছের মেলায় শুধুই মাছ কেনার বিষয় নয়, আছে একধরনের জামাই-মেয়েদের কেনার প্রতিযোগিতা। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরব অংশগ্রহণ করে শ্বশুরেরা। এ অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বসেছে উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে প্রায় অর্ধবর্ষের এই মাছের মেলা। এই মেলা কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে এ উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেওয়া হয়। এ দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব। অর্ধশতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। ক্রেতারা মাছের দাম হাকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত। শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। এই মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল এই মেলায়। ক্রেতারা খালিহাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নাইওর এসেছেন মেয়ে ও জামাই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনকেও। মেলা উপলক্ষে ওই যেন এলাকায় ঈদের আনন্দ বিরাজ করছিল। এই দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসি।
মেলায় ঘুরতে আসা মোছা. রোমানা আক্তার বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই আমি প্রতিবছর এই মেলা দেখতে আসি। এ মেলার জন্য আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করি। আমাদের বাড়ির জন্য এবার ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনেছি।
উপজেলার মাত্রাই গ্রামের বাসিন্দা মো. আতিকুর রহমান জানান, এই নবান্নের মেলা আমাদের কাছে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দের। বাড়িতে মেয়ে জামাই, ভাগ্নি জামাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। এই মাছের মেলা কেন্দ্র করে তারা বাড়িতে এসেছে।
মেলায় মাছ কিনতে আসা চঞ্চল বাবু নামে এক জালাই বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশী। তবে যাই হউক না কেন এই মেলা থেকে ১৮ কেজি ওজনের একটি ব্যাককার্প মাছ কিনে নিয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছি।
পাশের টাকাহুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল মতিন সরকার বলেন, প্রায় অর্ধবর্ষের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি এই এলাকায় ধান-আলুতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসে।
এই মেলায় মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন, মাছের মেলাতে বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কাতলা, রুই, মৃগেল ব্রিগেড, সিলভার ৫শ’ থেকে ১২শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সেখানে আরেক জন মাছ বিক্রেতা মো. রনি বলেন, আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ বিক্রি জন্য আসি। বর্তমান সবজিনিসের দাম বৃদ্ধি,তবে মাছের বাজারে তুলনায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কিনছেন। এবার মাছ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবেনা। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ১০ থেকে ১৫ মণ করে মাছ বিক্রি করেন। তাছাড়া লাভও মোটামুটি হবে।
অপর মাছ বিক্রেতা মাছ ব্যবসায়ী জহুরুল, এনামুল হক, আলমগীর হোসেন জানান, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বিক্রি সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ ভালোই থাকবে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি। দামও ছিল স্বাভাবিক।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, প্রতি বছর এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব বিরাজ করে।উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ
স্টাফ রিপোর্টার।
মোবাঃ০১৭৮৫৩৫২৫৫৮
No comments