Breaking News

নওগাঁর মান্দায় আড়াইশ বছরের রায় বাড়ি | N NEWS 24


মোঃ এ কে নোমান, নওগাঁঃ

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত মৈনম গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে আড়াইশ বছরের পুরনো এক দৃষ্টিনন্দন মাটির রাজবাড়ি। চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত কারুকাজ এবং দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় ভরা দোতলা এই বাড়িটি এখনও সকলের নজর কাড়ে।

স্থানীয়দের মতে, জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের পিতা প্রায় আড়াইশ বছর আগে পাল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে মাটির এই দোতলা বাড়িটি কিনে নেন এবং এখান থেকেই তার জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে সারদা প্রসাদ রায়ের অধীনে এই জমিদারি পরিচালিত হতে থাকে, যা আত্রাইসহ দিনাজপুর এবং নাটোর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই জমিদারির সকল কর্মকাণ্ডই এই মাটির বাড়ি থেকেই পরিচালিত হতো। 

কথিত আছে, জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের দুই পুত্র ছিল—বড়দা প্রসাদ রায় এবং শরৎ রায়। বড়দা প্রসাদ রায়ের পরিবারকে বলা হতো ‘বড় তরফ’ এবং শরৎ রায়ের পরিবার ছিল ‘ছোট তরফ’। বড়দা প্রসাদ রায় তৎকালীন সময়ে ১৯৪২ সাল থেকে যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই এলাকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যা বর্তমান যুগের চেয়ারম্যানের সমতুল্য। 

স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী, বলিহারের রাজা বিমলেন্দু রায় বাহাদুরের মাতুলালয় ছিল এই রায় বাড়ি। এই পরিবার শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রপথিক হিসেবে পরিচিত ছিল। দুর্গাপূজার সময় এ বাড়ির মুকুল রায় এবং বন্দর রায় ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীদের নিয়ে এসে থিয়েটার এবং যাত্রাপালার আয়োজন করতেন, যা স্থানীয় হিন্দু সমাজের সাথে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা তৈরি করত।

তবে বরদা প্রসাদ রায়ের সময় একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে, যার পিছনে ছিল জমিদার পরিবারের কিছু ব্যক্তির আচরণ। দাঙ্গার ফলে এই পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিহত হন, এবং বড়দা প্রসাদ রায়ের স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় বড়দা প্রসাদ রায় কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান এবং পরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রায় পরিবারের সদস্যরা একে একে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। সর্বশেষ বুরন রায় ও বাবন রায় এ বাড়িতে ছিলেন। 

বর্তমানে ক্রয় সূত্র এই জমির মালিক এস এম ব্রুহানী সুলতান গামা। গামার বড় ছেলে এস এম আশকার ইবনে সুলতান (শান্ত) প্রতিবেদককে জানান, তার দাদু এই মাটির বাড়িটি কিনেছিলেন এবং পরে বাড়িটির ঐতিহ্য সংরক্ষণে সংস্কারকাজ করেন। দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য এ বাড়ি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৈনম গ্রামে অবস্থিত এই রায় বাড়ি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। ইতিহাসে ভরা এই গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ রায় বাড়ি, যা সময়ের স্রোতেও তার প্রাচীন ঐতিহ্য এবং মর্যাদা ধরে রেখেছে।

No comments

গাইবান্ধায় ইউপি চেয়ারম্যানকে মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন | N NEWS 24

  গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানসহ বালু মহাল প্রতিরোধ কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচা...